২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের সরকারের অনুমোদন করা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বরাদ্দে বড় ধরনের সংকোচন দেখা দিতে পারে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলোকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনগণের অর্থের অপচয় রোধে এসব 'অপ্রয়োজনীয়' প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর চলতি বছরের ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে নেওয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্প ব্যয়ের তুলনায় সন্তোষজনক ফলাফল দেয়নি।
সম্প্রতি একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় উন্নয়ন বরাদ্দ কমানো হবে।’
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে উন্নয়ন বরাদ্দ বাস্তবায়নের হার ব্যতিক্রম হিসেবে ৮ শতাংশ কম হয়েছে। আর এটি বৈদেশিক অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এ হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির গতি ধীর রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের হার রেকর্ড করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আইএমইডি’র তথ্যমতে, বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের অনেক প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ব্যয়ের অনুপাতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনার সম্ভাবনা কম।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করিনি যে এগুলো কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল আনবে, তাই আমরা সেগুলো কাটছাঁট করেছি। সাধারণত সংশোধিত উন্নয়ন বরাদ্দ কমানো হয়, তবে এবার কমানোটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হবে।’
অনেক প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে যাওয়াকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির আংশিক কারণ হিসেবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র।
সূত্র বলছে, তাদের পালিয়ে যাওয়ার ফলে প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোনো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প থেকে সরে এসে উদ্ভাবনী ও নতুন ধরনের প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: জাপানের কাছে বাজেট সহায়তা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা, উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান
সূত্র জানায়, পরিকল্পনা উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা তাদের ব্যয়ের তুলনায় একাধিক ইতিবাচক ফল দিতে পারে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে।
এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত, ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ)।
এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে এনইসি।
নতুন এডিপিতে ১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি সমীক্ষা প্রকল্প, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের ৮০টি প্রকল্পসহ মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩২১টি।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিসহ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: অসঙ্গতি দূর করতে জেন্ডার বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: উপদেষ্টা